কিশোরগঞ্জ শহীদ সৈয়দ নজরুল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চুরি-ছিনতাই বেড়েই চলেছে, ক্ষতির মুখে রোগী ও স্বজনরা

কিশোরগঞ্জের শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দিন দিন বাড়ছে চুরি ও ছিনতাইয়ের ঘটনা। রোগী ও তাদের স্বজনরা হাসপাতালের ওয়ার্ড থেকে হারাচ্ছেন মোবাইল ফোন, স্বর্ণালঙ্কার ও নগদ অর্থসহ মূল্যবান জিনিসপত্র। নিরাপত্তা ব্যবস্থার ঘাটতির সুযোগ নিচ্ছে অসাধু চক্র। এই পরিস্থিতিতে আতঙ্কে রয়েছেন সাধারণ মানুষ।

সম্প্রতি এমন এক ঘটনায় হাসপাতালের অর্থোপেডিক্স বিভাগে ভর্তি এক রোগীর স্বজন চুরির শিকার হয়েছেন। আফিয়া ফাহমিদা জুলফা নামে ওই তরুণী জানান, তার মা উম্মে হানিকে চিকিৎসার জন্য ১০ এপ্রিল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। রোগীর পরিচর্যার জন্য তিনিও ওয়ার্ডে অবস্থান করছিলেন। কিন্তু ১৬ এপ্রিল দিবাগত রাত আনুমানিক ২টা থেকে ৩টার মধ্যে তিনি হঠাৎ ঘুমিয়ে পড়লে কে বা কারা তার ভ্যানিটি ব্যাগ নিয়ে পালিয়ে যায়।

চুরি হওয়া ব্যাগে ছিল প্রায় তিন হাজার টাকা, আধা ভরি সোনার কানের দুল ও একটি নাকফুল। চুরির বিষয়টি বুঝতে পেরে তিনি দ্রুত হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে জানান। কিন্তু কর্তৃপক্ষ জানায়, যে ওয়ার্ডে চুরির ঘটনা ঘটেছে, সেখানে সিসিটিভি ক্যামেরা দীর্ঘদিন ধরে অচল অবস্থায় রয়েছে। ফলে চোর শনাক্তকরণ প্রক্রিয়া শুরুই করা যাচ্ছে না।

এ বিষয়ে কথা হলে হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ডা. হেলিশ রঞ্জন জানান, “হাসপাতালের বেশ কিছু ওয়ার্ডে সিসিটিভি ক্যামেরা দীর্ঘদিন ধরে অচল। এগুলো পিডব্লিউডি থেকে সরবরাহ করা হয়েছিল। তাদের দায়িত্ব ছিল মেরামতের, কিন্তু এখনো তারা কাজটি করেনি।”

এদিকে শুধু এই একটি ঘটনা নয়, খোঁজ নিয়ে জানা গেছে—বিগত কয়েক মাসে হাসপাতালে এ ধরনের একাধিক চুরি ও ছিনতাইয়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে। অনেকে অভিযোগ করেননি, আবার অনেকে চুপচাপ ক্ষতির শিকার হয়ে ফিরে গেছেন।

হাসপাতাল এলাকায় নিয়মিত কোনো নিরাপত্তাকর্মীর টহল না থাকায় এবং প্রবেশপথে পর্যাপ্ত নজরদারি না থাকার কারণেই চোরচক্র এতোটা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।

এই বিষয়ে কিশোরগঞ্জ সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, “আমরা অভিযোগ পেয়েছি এবং তদন্ত প্রক্রিয়া শুরু করেছি। দোষীদের শনাক্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

রোগীর স্বজনরা বলছেন, হাসপাতাল হলো এমন একটি জায়গা যেখানে মানুষ সবচেয়ে বেশি নিরাপত্তা প্রত্যাশা করে। সেখানে বারবার এমন চুরির ঘটনা সাধারণ মানুষকে নিরাপত্তাহীনতায় ফেলছে। বিশেষ করে মধ্যরাত বা ভোররাতের সময়টাতে এসব ঘটনা বেশি ঘটে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নার্স জানান, হাসপাতালের অভ্যন্তরে দায়িত্বপ্রাপ্ত নিরাপত্তাকর্মীদের সংখ্যা খুবই সীমিত। এমনকি তারা প্রতিটি ওয়ার্ডে ঘুরে দায়িত্ব পালন করেন না। ফলে অপরিচিত কেউ ঢুকেও সহজেই ঘটনা ঘটিয়ে পালিয়ে যেতে পারে।

এমন পরিস্থিতিতে দ্রুত সিসিটিভি ক্যামেরা মেরামত ও নিরাপত্তা ব্যবস্থার আধুনিকায়নের দাবি জানিয়েছেন রোগী ও তাদের স্বজনরা। তাদের মতে, হাসপাতালের প্রতিটি প্রবেশপথ ও ওয়ার্ডে নজরদারি বাড়ালে অনেকটাই কমে আসবে এসব অপরাধ।

জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবং হাসপাতালকে একটি নিরাপদ আশ্রয়স্থলে পরিণত করতে কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ এখন সময়ের দাবি।

Post a Comment

Previous Post Next Post