এই জনসমুদ্র প্রমাণ করে সকল বাংলাদেশীরা ফিলিস্তিনের পাশে : মিজানুর রহমান আজহারী


কার ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যান এক অনন্য মানবিক আন্দোলনের সাক্ষী হলো শনিবার (১২ এপ্রিল)। গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের বর্বরোচিত হামলা ও সাধারণ মানুষের গণহত্যার প্রতিবাদে আয়োজিত "মার্চ ফর গাজা" কর্মসূচি রূপ নেয় এক বিশাল গণসমাবেশে, যেখানে লাখো মানুষ অংশগ্রহণ করে মানবতার পক্ষে এবং নির্যাতিত ফিলিস্তিনিদের পাশে দাঁড়ানোর দৃঢ় বার্তা দেয়।

এ কর্মসূচিতে মুখরিত ছিল প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর, আর এর অন্যতম নেতৃত্বে ছিলেন জনপ্রিয় ইসলামিক চিন্তাবিদ ও বক্তা মাওলানা মিজানুর রহমান আজহারী। বিকেল সাড়ে ৩টায় তিনি মঞ্চে উঠে উপস্থিত জনতার উদ্দেশে দৃপ্ত কণ্ঠে বলেন, "এই জনসমুদ্র প্রমাণ করে, প্রতিটি বাংলাদেশির হৃদয়ে একটি করে ফিলিস্তিন বাস করে। আমরা নির্যাতিত গাজাবাসীর সঙ্গে আছি।"

আজহারী তার বক্তব্যে জাতিসংঘের নিষ্ক্রিয় ভূমিকার কঠোর সমালোচনা করে বলেন, "আমার ভাই শহীদ কেন? জাতিসংঘ, এর উত্তর চাই।" তার কণ্ঠে উচ্চারিত এই স্লোগান মুহূর্তেই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের প্রতিটি কোণে প্রতিধ্বনিত হয়। "ফিলিস্তিন জিন্দাবাদ", "আল কুদস জিন্দাবাদ"—এমন অসংখ্য স্লোগানে মুখর হয় জনতা, যার প্রতিটি ধ্বনি ছিল ইসরায়েলি দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে এক রুদ্ধশ্বাস প্রতিবাদ।

এর আগে দিনটির শুরুতেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি বার্তায় আজহারী লেখেন, “আজকের মার্চ নিছক কোনো পদযাত্রা নয়; এটি এ অঞ্চলের মুসলিম উম্মাহর নতুন এক ঐক্য গঠনের সূচনা।” ফেসবুকে তিনি আরও জানান, "আমি এখন গাজার জন্য পদযাত্রার পথে। আসুন, আপনারাও মানবতার এই মিছিলে শামিল হন পরিবার-পরিজন নিয়ে।"

এই ব্যতিক্রমী কর্মসূচিতে ছিল রাজনৈতিক দল, সাংস্কৃতিক সংগঠন এবং নাগরিক সমাজের সম্মিলিত অংশগ্রহণ। বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, এনসিপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে এই মানববন্ধনে অংশগ্রহণ করেন। একইসঙ্গে উপস্থিত ছিলেন বিভিন্ন খ্যাতনামা কবি, লেখক, শিল্পী এবং সোশ্যাল মিডিয়ার জনপ্রিয় ব্যক্তিরা। মতাদর্শের ভেদাভেদ ভুলে, সকলে এক কাতারে দাঁড়িয়ে গাজার জনগণের প্রতি সংহতি জানান।

বিশ্লেষকরা বলছেন, ‘মার্চ ফর গাজা’ ছিল বাংলাদেশের নাগরিক সমাজের জাগ্রত বিবেকের বহিঃপ্রকাশ। ইসরায়েলি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে এই গণজাগরণ শুধু একটি কর্মসূচি নয়, এটি ভবিষ্যতের প্রতিবাদ আন্দোলনের দিকনির্দেশনাও বটে।

অনেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাদের অভিজ্ঞতা শেয়ার করেন। অংশগ্রহণকারীদের একজন লেখেন, “এই কর্মসূচিতে এসে আমি প্রথমবার বুঝেছি, মানবতার পক্ষে দাঁড়ানোর কী এক অদ্ভুত শক্তি রয়েছে।” অনেকে বলেন, রাজনৈতিক মতপার্থক্য থাকা সত্ত্বেও এখানে যে একতার ছবি ফুটে উঠেছে, তা বাংলাদেশের ইতিহাসে বিরল।

সমাবেশে অংশগ্রহণকারীরা ইসরায়েলের যুদ্ধাপরাধের বিচার এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কার্যকর পদক্ষেপের দাবি জানান। তারা বলেন, “ফিলিস্তিনের শিশুদের রক্তের বদলা শুধু কথায় নয়, কাজেও চাই। জাতিসংঘের উচিত এখনই দৃঢ় অবস্থান নেওয়া।”

এই কর্মসূচি বাংলাদেশের জনগণের আন্তর্জাতিক ইস্যুতে মানবিক অবস্থান এবং সচেতনতা বৃদ্ধির এক গুরুত্বপূর্ণ নজির হয়ে থাকবে। গাজার আকাশে যেন শান্তির বার্তা পৌঁছায়—এই ছিল সবার অন্তরের প্রার্থনা।

Post a Comment

Previous Post Next Post