কিশোরগঞ্জের ইটনা উপজেলার দুইটি প্রধান বাজার—নতুন বাজার ও পুরান বাজার—আগামীকাল থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। ইটনা বাজার কমিটির পক্ষ থেকে আজ সন্ধ্যায় এই ঘোষণা দেওয়া হয়, যা ইতোমধ্যেই স্থানীয়দের মধ্যে চরম উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা সৃষ্টি করেছে।
বাজার কমিটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ইটনা ঘাট নিয়ে চলমান জটিলতা এবং বাজার কমিটির নিয়ন্ত্রণ হারানোর প্রতিবাদে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বাজার কমিটির দাবি, পূর্বে ইটনা ঘাট তাদের নিয়ন্ত্রণে থাকলেও বর্তমানে সেটি নতুন এক ইজারাদারের অধীনে চলে গেছে, যিনি বাজার কমিটির অংশ নন। এই ইজারাদার কর্তৃপক্ষ ঘাটে আসা ক্রেতা ও বিক্রেতাদের কাছ থেকে বাড়তি ভাড়া আদায়ের উদ্যোগ নিয়েছে, যা আগে কখনোই করা হয়নি।
বাজার কমিটির অভিযোগ, নতুন ইজারাদারের এই সিদ্ধান্ত বাজারের স্বাভাবিক পরিবেশে বিঘ্ন ঘটাচ্ছে এবং সাধারণ মানুষকে অর্থনৈতিকভাবে চাপে ফেলছে। এ পরিস্থিতিতে তারা দ্ব্যর্থহীনভাবে ঘোষণা করেছে যে, ইটনা ঘাটের মালিকানা ও নিয়ন্ত্রণ পুনরায় বাজার কমিটির হাতে না আসা পর্যন্ত বাজার বন্ধ থাকবে। তবে জনসাধারণের প্রয়োজন বিবেচনায়, ওষুধ, চিকিৎসা ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দোকান খোলা রাখার অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, ইটনা বাজার ঘাট পূর্বে বাজার কমিটি পরিচালনা করত এবং কোনো ধরনের ভাড়া আদায় করা হতো না। ফলে বিক্রেতা ও ক্রেতারা স্বাচ্ছন্দ্যে কেনাবেচা করতে পারতেন। কিন্তু নতুন ইজারাদার এই ব্যবস্থা বদলে দিয়ে ঘাটে পণ্য লোড-আনলোড বা প্রবেশের সময় ভাড়া আদায়ের প্রক্রিয়া শুরু করেছেন, যা সাধারণ ব্যবসায়ী ও ক্রেতাদের মধ্যে চরম অসন্তোষের জন্ম দিয়েছে।
এ ঘটনায় আজ সন্ধ্যায় পুরো ইটনা উপজেলায় চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে। অনেকেই বাজার বন্ধ হওয়ার খবর শুনেই প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনতে বাজারে ছুটে যান। এমনকি মুষলধারে বৃষ্টির মধ্যেও অনেক মানুষকে বাজারে আগাম কেনাকাটা করতে দেখা যায়।
স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, "আমরা গরিব মানুষ। প্রতিদিন বাজারে যাই প্রয়োজন মতো জিনিস কিনতে। এখন বাজার বন্ধ থাকলে আমাদের চলবে কিভাবে?"
ব্যবসায়ীরাও এ অবস্থায় উৎকণ্ঠায় রয়েছেন। তারা বলছেন, বাজার বন্ধ থাকলে তাদের পুঁজির উপর প্রভাব পড়বে এবং অনেকেই হয়তো ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। তারা দ্রুত সমস্যার সমাধান চেয়ে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
ইটনার বাজার কমিটির এক সদস্য বলেন, "আমরা কখনোই বাজার চালাতে গিয়ে মানুষের উপর বোঝা দেইনি। কিন্তু এখন সাধারণ মানুষের ঘাড়ে বাড়তি চাপ পড়ছে। প্রশাসনের উচিত দ্রুত এই সমস্যা সমাধান করে বাজারের স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনা।"
এই সংকট নিরসনে এখনো প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক বিবৃতি পাওয়া যায়নি। তবে স্থানীয় সূত্র বলছে, প্রশাসনের কর্মকর্তারা বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করছেন এবং সমাধানের জন্য আলোচনা চলছে।
বাজার ঘাট নিয়ে এই দ্বন্দ্ব যদি দীর্ঘস্থায়ী হয়, তাহলে ইটনা উপজেলার সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন জীবনযাত্রা চরমভাবে ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
Post a Comment