কিশোরগঞ্জ শহরে নিরাপদ খাদ্য আইন লঙ্ঘনের দায়ে চারটি খাদ্য উৎপাদন ও বিক্রেতা প্রতিষ্ঠানকে মোট চার লাখ টাকা জরিমানা করেছে বিশুদ্ধ খাদ্য আদালত। ১৯ এপ্রিল শনিবার দুপুরে সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আরিফুল ইসলামের আদালতে এই রায় প্রদান করা হয়।
জানা গেছে, কিশোরগঞ্জ শহরের বত্রিশ ও একরামপুর এলাকায় পরিচালিত এক অভিযানে এই জরিমানার সিদ্ধান্ত আসে। অভিযানকালে খাদ্যদ্রব্যে ক্ষতিকর রাসায়নিক রং মেশানো, মোড়কবিহীন দই উৎপাদন এবং মেয়াদোত্তীর্ণ খাদ্যসামগ্রী সংরক্ষণের প্রমাণ পাওয়া যায়। এসব অপরাধে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
প্রশাসনের তথ্য মতে, শহরের বত্রিশ এলাকায় অবস্থিত নয়ন ঘোষ নামের এক দই ব্যবসায়ীকে পণ্যে সঠিক মোড়ক না থাকার দায়ে এক লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। একই এলাকার সানি বেকারিকে খাদ্যে ক্ষতিকর কেমিক্যাল রং মেশানোর অপরাধে এক লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।
এছাড়া একরামপুর এলাকার দুইটি জনপ্রিয় মিষ্টির দোকান—লক্ষ্মীনারায়ণ মিষ্টান্ন ভাণ্ডার এবং জগতলক্ষ্মী মিষ্টান্ন ভাণ্ডার—প্রতিটিকে এক লাখ টাকা করে জরিমানা করা হয়। এদের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, তারা উৎপাদিত খাদ্যপণ্যে ক্ষতিকর উপাদান ব্যবহার করছে এবং যথাযথ মান নিয়ন্ত্রণ অনুসরণ করছে না।
অভিযানের সময় কিশোরগঞ্জ জেলার নিরাপদ খাদ্য কর্মকর্তা মো. আশরাফুল ইসলাম তালুকদার, জেলা স্যানিটারি ইন্সপেক্টর শংকর চন্দ্রসহ প্রশাসনের অন্যান্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। অভিযানে সংশ্লিষ্ট বেকারিগুলো থেকে বিপুল পরিমাণ মেয়াদোত্তীর্ণ খাদ্যদ্রব্য জব্দ করে তাৎক্ষণিকভাবে ধ্বংস করা হয়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, খাদ্যে কেমিক্যাল রং ও অন্যান্য ক্ষতিকর উপাদান ব্যবহারের ফলে মানুষের স্বাস্থ্যের ওপর মারাত্মক প্রভাব পড়তে পারে। এগুলোর মধ্যে ক্যান্সার, কিডনি সমস্যা, লিভার নষ্ট, এলার্জি এবং শিশুদের বুদ্ধির বিকাশে বাধা সৃষ্টি হওয়াসহ নানা জটিল রোগ হতে পারে। ফলে এই ধরনের অপরাধ কঠোরভাবে দমন করা অত্যন্ত জরুরি।
নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের এক কর্মকর্তা জানান, “আমরা নিয়মিত বাজার তদারকির মাধ্যমে নিশ্চিত করছি যেন কোনো খাদ্য ব্যবসায়ী জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকিস্বরূপ পণ্য বাজারজাত করতে না পারে। এ ধরনের অভিযান চলমান থাকবে।”
স্থানীয় সচেতন মহল এই অভিযানকে স্বাগত জানিয়েছে এবং প্রশাসনের প্রতি ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেছে। তারা বলেন, “এই ধরনের অভিযান না হলে অসাধু ব্যবসায়ীরা বারবার একই অপরাধ করবে। নিয়মিত নজরদারি ও কঠোর শাস্তিই পারে এই সমস্যা সমাধানে কার্যকর ভূমিকা রাখতে।”
উল্লেখ্য, নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করতে দেশের প্রতিটি জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে এখন নিয়মিতভাবে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে অভিযান পরিচালনা করছে সরকার। জনস্বাস্থ্য রক্ষায় এমন পদক্ষেপ আরও জোরদার করার দাবিও জানাচ্ছেন সচেতন নাগরিকরা।
Post a Comment