প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ঘেরা কিশোরগঞ্জের হাওরাঞ্চলে এবারের বোরো মৌসুমে ধানের বাম্পার ফলনে কৃষকদের মধ্যে যেমন ছিলো আনন্দ, তেমনি ধান কাটার সময় এসে দেখা দিয়েছে নতুন দুর্ভোগ। কম্বাইন হারভেস্টারের মাধ্যমে ধান কাটার প্রক্রিয়া সহজ হলেও, এবার কৃষকদের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা দাবি করায় ক্ষোভ তৈরি হয়েছে।
প্রত্যেক বছর হাওরাঞ্চলে ধান কাটার মৌসুমে আধুনিক কৃষি যন্ত্র কম্বাইন হারভেস্টারের ব্যবহার বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই যন্ত্রের মাধ্যমে অল্প সময়ে অধিক ধান কাটা সম্ভব হওয়ায় কৃষকদের কষ্ট কমে আসে। সাধারণত প্রতি শতক জমির ধান কাটতে খরচ হয় ৬০ থেকে ৭০ টাকা। কিন্তু চলতি মৌসুমে অনেক জায়গায় একই কাজের জন্য দাবি করা হচ্ছে ৮০ থেকে ১০০ টাকা, যা কৃষকদের জন্য বাড়তি বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
অতিরিক্ত খরচে কৃষকদের দুশ্চিন্তা
তাড়াইল উপজেলার কৃষক শহীদ মিয়া বলেন, “এবার ধান ভালোই ফলেছে, ভেবেছিলাম গত বছরের ক্ষতি কিছুটা পুষিয়ে নিতে পারবো। কিন্তু ধান কাটার জন্য যে খরচ হচ্ছে, তা দেখে তো মাথায় হাত পড়েছে।” তিনি আরও বলেন, “গত বছর বন্যায় আমাদের অনেক ফসল নষ্ট হয়েছিল। এ বছর আশার আলো দেখলেও এখন এই অতিরিক্ত খরচ আমাদের দুশ্চিন্তায় ফেলে দিয়েছে।”
একই রকম অভিযোগ উঠেছে ইটনা, অষ্টগ্রাম, মিঠামইন এবং নিকলী উপজেলার বিভিন্ন হাওর এলাকার কৃষকদের পক্ষ থেকেও। তাদের দাবি, কিছু অসাধু কম্বাইন হারভেস্টার মালিক অতিরিক্ত মুনাফার লোভে বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে বেশি ভাড়া আদায় করছেন।
প্রশাসনের হস্তক্ষেপ চায় কৃষক সমাজ
স্থানীয় কৃষকদের দাবি, কৃষি যন্ত্রপাতি ভাড়া নির্ধারণে নির্দিষ্ট কোনো নিয়ম না থাকায় এমন অনিয়ম বেড়ে যাচ্ছে। কৃষক আবদুল কুদ্দুস বলেন, “প্রতি বছর একেক জন একেক রকম ভাড়া নেয়। এবার তো সীমা ছাড়িয়ে গেছে। আমরা চাই প্রশাসন এই বিষয়ে নির্ধারিত হার নির্ধারণ করে দিক এবং মাঠপর্যায়ে তদারকি বাড়াক।”
এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্থানীয় কৃষি কর্মকর্তারা জানান, বিষয়টি তাদের নজরে এসেছে এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কিশোরগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা বলেন, “কৃষকদের অভিযোগের ভিত্তিতে আমরা দ্রুতই একটি সমন্বিত মনিটরিং টিম গঠন করবো, যাতে নির্ধারিত দামের বাইরে কেউ অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করতে না পারে।”
কৃষিতে প্রযুক্তির সুফল, কিন্তু ব্যবস্থাপনায় ঘাটতি
কম্বাইন হারভেস্টার কৃষি খাতে একটি যুগান্তকারী প্রযুক্তি হলেও, এর ব্যবস্থাপনায় সঠিক নীতিমালা না থাকলে কৃষকরা চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বিশেষ করে হাওর অঞ্চলের মতো এলাকায়, যেখানে শ্রমিক সংকট প্রকট এবং ধান কাটার সময় সীমিত, সেখানে কম্বাইন হারভেস্টারের বিকল্প নেই। কিন্তু ব্যবসায়িক স্বার্থে যদি কৃষকদের শোষণ করা হয়, তবে প্রযুক্তির সুফলও হারিয়ে যেতে বাধ্য।
Post a Comment