তাড়াইল উপজেলার তালজাংগার কাঞ্চনের চানাচুর: তিন দশকের স্বাদের ঐতিহ্য ও সফল উদ্যোক্তার গল্প

তাড়াইল উপজেলার তালজাঙ্গা ইউনিয়নের ছোট্ট এক গ্রামে ১৯৯৫ সালে যাত্রা শুরু করা কাঞ্চনের চানাচুর ব্যবসা এখন স্থানীয়দের কাছে একটি স্বাদ ও আস্থার প্রতীক। প্রায় তিন দশক ধরে নিজ হাতে তৈরি চানাচুর বিক্রি করে স্থানীয় বাজারে একটি অনন্য অবস্থান তৈরি করেছেন কাঞ্চন মিয়া। তাঁর এই নিরব প্রচেষ্টা শুধু নিজের জীবনের পরিবর্তনই নয়, বরং গ্রামের অর্থনীতিতে এক আলোকবর্তিকা হিসেবে কাজ করছে।তালজাঙ্গা ইউনিয়নের এক প্রান্তিক কৃষক পরিবারের সন্তান কাঞ্চন মিয়া। জীবনের কঠিন বাস্তবতায় উচ্চশিক্ষার সুযোগ না পেলেও থেমে থাকেননি তিনি। ১৯৯৫ সালে তিনি ছোট্ট একটি ভ্রাম্যমাণ দোকানে নিজের হাতে তৈরি চানাচুর বিক্রি শুরু করেন। শুরুতে দিনে মাত্র ৫-১০ প্যাকেট বিক্রি হলেও, স্বাদ ও মানের কারণে খুব দ্রুতই গ্রাহকদের মনে জায়গা করে নেন।কাঞ্চনের চানাচুরের বিশেষত্ব হলো এর নিজস্ব ঘরোয়া রেসিপি। ভাজা মুগডাল, বাদাম, মসলা ও ঝাল মেশানোর এক নিজস্ব অনুপাত তৈরি করেছেন তিনি, যা এই অঞ্চলের অন্য চানাচুর বিক্রেতাদের থেকে তাঁকে আলাদা করে রেখেছে। কোনো ধরনের কেমিক্যাল বা সংরক্ষণকারী ব্যবহার না করায় এর স্বাদ যেমন খাঁটি, তেমনি স্বাস্থ্যকরও।একটানা প্রায় ৩০ বছর ধরে একই মান বজায় রেখে চানাচুর বিক্রি করা খুব সহজ কাজ নয়। তবে কাঞ্চন সেটা করে দেখিয়েছেন। স্থানীয় বাজার ছাড়াও আশপাশের কয়েকটি ইউনিয়নে তাঁর চানাচুর নিয়মিত সরবরাহ হয়। এমনকি ঈদ কিংবা পূজার মৌসুমে অর্ডার বেড়ে যায় কয়েকগুণ।কাঞ্চনের এই ব্যবসা এখন শুধুমাত্র ব্যক্তিগত আয়ের উৎস নয়, বরং এলাকার আরও কয়েকজনকে তিনি চানাচুর তৈরির কাজেও যুক্ত করেছেন। এতে স্থানীয় কিছু মানুষের কর্মসংস্থানও তৈরি হয়েছে। তরুণ প্রজন্মের জন্য তিনি এক বাস্তব অনুপ্রেরণা—যে ইচ্ছাশক্তি আর পরিশ্রম থাকলে যে কেউ নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারে।ব্যবসা শুরুতে কাঞ্চনকে অনেক বাধার মুখে পড়তে হয়েছে। পুঁজির অভাব, উপকরণের দামের ঊর্ধ্বগতি এবং বাজার প্রতিযোগিতা সবই ছিল বড় চ্যালেঞ্জ। কিন্তু ধৈর্য, নিষ্ঠা ও গুণগত মানের কারণে তিনি সেসব কাটিয়ে উঠে আজ নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন।কাঞ্চন চান, তাঁর এই চানাচুর একদিন উপজেলার গণ্ডি পেরিয়ে জেলা এবং দেশজুড়ে পরিচিত হোক। এজন্য তিনি চান ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের জন্য সরকারি সহায়তা আরও সহজলভ্য হোক। তিনি মনে করেন, স্থানীয় পণ্যের উন্নয়নেই টেকসই অর্থনীতির ভিত্তি গড়া সম্ভব।

Post a Comment

Previous Post Next Post