ভাইয়ের মৃত্যুর শোক সইতে না পেরে আরেক ভাইয়ের মৃত্যু—একই পরিবারের দুই ভাইয়ের এমন মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে কিশোরগঞ্জের ভৈরব পৌর শহরের কালিপুর এলাকায়। বুধবার (১৬ এপ্রিল) সকালে কিছু সময়ের ব্যবধানে পরপর দুই ভাই মারা যান। এই হৃদয়বিদারক ঘটনা এলাকাবাসীকে স্তব্ধ করে দিয়েছে।
নিহতরা হলেন—কালিপুর মধ্যপাড়া এলাকার দেওয়ারিশ বেপারীর বাড়ির বাসিন্দা মৃত দুধ মোল্লার দুই ছেলে রইছ মিয়া (৭০) ও তাহের মিয়া (৬০)।
জানা গেছে, সকাল ১০টার দিকে বার্ধক্যজনিত কারণে নিজ বাড়িতেই মৃত্যুবরণ করেন রইছ মিয়া। বড় ভাইয়ের মৃত্যুসংবাদ পেয়ে ছোট ভাই তাহের মিয়া মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন এবং হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে তাকে দ্রুত হাসপাতালে নেওয়া হলে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বেলা ১১টার দিকে তারও মৃত্যু হয়।
একই দিনে দুই ভাইয়ের মৃত্যুর পর বুধবার মাগরিবের নামাজের পর তাদের জানাজা একসঙ্গে অনুষ্ঠিত হয় স্থানীয় মসজিদে। জানাজার পর তাদের দাফন করা হয় এলাকার পুরাতন ঈদগাহ সংলগ্ন কবরস্থানে।
এ বিষয়ে রইছ মিয়ার ছেলে মো. আল-আমিন বলেন, “বাবার মৃত্যু যেন চাচাকে গভীরভাবে নাড়া দেয়। বাবার মৃত্যুর পরপরই চাচা গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। হাসপাতালে নেওয়ার পর তাকেও হারাতে হলো। আমরা একই দিনে বাবা ও চাচাকে হারিয়ে বাকরুদ্ধ।”
প্রতিবেশী কাইয়ুম মিয়া বলেন, “রইছ মিয়া ও তাহের মিয়া ছিলেন অত্যন্ত ভদ্র ও সহানুভূতিশীল মানুষ। দুই ভাইয়ের মধ্যে পারস্পরিক ভালোবাসা ছিল দেখার মতো। তারা দুজনই চার সন্তানের জনক, সন্তানেরাও সমাজে প্রতিষ্ঠিত। কিন্তু একদিনে দুই ভাইয়ের মৃত্যুর খবরে আমরা এলাকাবাসী গভীরভাবে শোকাহত।”
ভৈরব পৌরসভার সাবেক মেয়র ও পৌর বিএনপির সভাপতি মো. শাহিন বলেন, “রইছ মিয়া ও তাহের মিয়া ছিলেন আমাদের এলাকার সুপরিচিত ও সজ্জন মানুষ। তাদের মৃত্যু আমাদের জন্য অপূরণীয় ক্ষতি। তাদের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি।”
একই দিনে এক পরিবারের দুই ভাইয়ের মৃত্যু যেন ভৈরবের কালিপুর এলাকাকে স্মরণীয় এক শোকবার্তায় রূপ দিয়েছে। সমাজের কাছে এটি ভালোবাসা, পারস্পরিক টান ও পরিবারিক বন্ধনের এক জীবন্ত উদাহরণ হয়ে থাকবে।
Post a Comment