কিশোরগঞ্জ জেলার কটিয়াদি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসক সংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে। ৫০ শয্যার এই সরকারি হাসপাতালের ৩১টি অনুমোদিত চিকিৎসক পদের মধ্যে ১৪টি পদ শূন্য রয়েছে। এর ওপর আরও ৭ জন চিকিৎসক প্রেষণে রাজধানী ঢাকা ও অন্যান্য জায়গায় বদলি থাকায় কার্যত মাত্র ৪ থেকে ৫ জন চিকিৎসক নিয়মিত রোগী দেখছেন। ফলে প্রায় সাড়ে তিন লাখ জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্যসেবা চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে।
হাসপাতাল সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, প্রেষণে থাকা চিকিৎসকরা বেতন-ভাতা গ্রহণ করতে কেবল কটিয়াদি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে উপস্থিত হন। দৈনন্দিন সেবার সঙ্গে তাদের কোনো সরাসরি সম্পৃক্ততা নেই। এমনকি কেউ কেউ দীর্ঘদিন অনুপস্থিত রয়েছেন কোনো স্পষ্ট কারণ ছাড়াই।
এই সংকটের ফলে চিকিৎসা সেবা নিতে অনেকেই বাধ্য হচ্ছেন কিশোরগঞ্জ জেলা সদর হাসপাতাল অথবা বিভিন্ন প্রাইভেট ক্লিনিক ও হাসপাতালে ছুটে যেতে। এতে অতিরিক্ত ব্যয় বহন করতে গিয়ে সাধারণ মানুষের কষ্টের শেষ নেই। কেউ কেউ আবার অপেক্ষা করেন শুক্রবারের জন্য—যেদিন অতিথি চিকিৎসকরা কিছু সময়ের জন্য স্থানীয় ক্লিনিকে রোগী দেখেন। তবে সন্ধ্যা নামার আগেই তারা চলে যান, ফলে সেবা পেতে সাধারণ রোগীদের নির্ভর করতে হয় ভাগ্যর ওপর।
কর্তৃপক্ষের দেওয়া তথ্যমতে, বর্তমানে যেসব চিকিৎসক প্রেষণে রয়েছেন বা অনুপস্থিত:
ডা. লোপা চৌধুরী (মাতৃত্বকালীন ছুটি, ৮ আগস্ট ২০২৪ থেকে)
ডা. মো. হাবিবুর রহমান মৃধা (শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউটে প্রেষণে, ৩১ মার্চ ২০২৪ থেকে)
ডা. ফাহিম আহমেদ (কুমিটোলা ৫০০ শয্যার হাসপাতালে, ৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ থেকে)
ডা. কাজী ফারহানা বিনতে শামীম (সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজে, ৮ এপ্রিল ২০২৪ থেকে)
ডা. আফসানা সুলতানা তমা (যোগদানের পরদিন থেকেই অনুপস্থিত, ২ সেপ্টেম্বর ২০২৪ থেকে)
ডা. সজীব কুমার ঘোষ (সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজে, ২৯ আগস্ট ২০২২ থেকে)
ডা. জাহিদুল ইসলাম ও ডা. রাঈসা মুনজেরিন (উভয়েই ঢাকা মেডিকেল কলেজে প্রেষণে)
এ বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার (আরএমও) ডা. সৈয়দ মো. শাহরিয়ার জানান, "৫০ শয্যার এই হাসপাতালে প্রতিদিন গড়ে ৬০ থেকে ১০০ জন রোগী ভর্তি থাকে। বহির্বিভাগেও প্রতিদিন ৬০০ থেকে ৮০০ রোগী আসে। এত রোগীর তুলনায় চিকিৎসকের সংখ্যা খুবই কম। ফলে কাঙ্ক্ষিত সেবা দিতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে।"
অন্যদিকে, দায়িত্বপ্রাপ্ত উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. ঈশা খান বলেন, “প্রেষণ বাতিল ও শূন্যপদ পূরণের জন্য একাধিকবার সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে লিখিতভাবে জানিয়েছি। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরেও চাহিদা পাঠানো হয়েছে।”
এলাকাবাসী বলছে, এটি একটি চরম অবহেলার চিত্র। সরকারি চিকিৎসকরা প্রেষণে থেকে বেতন ভাতা নিলেও সেবা না দেওয়া একধরনের দায়িত্বহীনতা। তারা অবিলম্বে এই প্রেষণ বাতিল করে চিকিৎসকদের নিয়মিত কাজে ফেরানোর দাবি জানিয়েছেন।
Post a Comment