কিশোরগঞ্জের প্রখ্যাত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গুরুদয়াল সরকারি কলেজের ২০২৩ সালের উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থী জিন্নতা আক্তার তার অসমাপ্ত স্বপ্ন নিয়েই পৃথিবী ছেড়ে চলে গেছেন। মাত্র ১৯ বছর বয়সে মেধাবী এই ছাত্রীর জীবনপ্রবাহ থেমে যায় মরণব্যাধি ব্লাড ক্যান্সারের থাবায়। পরীক্ষার আগমুহূর্তে দীর্ঘ চার থেকে পাঁচ মাস ধরে চিকিৎসাধীন থাকার পর ২০২৩ সালেই তিনি ইন্তেকাল করেন। তাঁর অকাল মৃত্যু পরিবার ও সমাজে গভীর শোকের ছায়া ফেলেছে।
জিন্নতা আক্তার ছিলেন এক প্রতিভাবান শিক্ষার্থী। পরিবার ও শিক্ষক-সহপাঠীদের প্রত্যাশা ছিল, সে উচ্চশিক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে সমাজে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস, এক মর্মান্তিক রোগ তার জীবনযুদ্ধকে অসমাপ্ত রেখে গেছে। চিকিৎসার ব্যয়ভার বহনে পরিবার চরম অর্থকষ্টে পড়লে সমাজের কিছু হৃদয়বান মানুষ এগিয়ে আসেন।
এই দুঃসময়ে কিশোরগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান পাগলা মসজিদ তার চিকিৎসা সহায়তায় এগিয়ে আসে। মসজিদের তহবিল থেকে জিন্নতার অসুস্থকালীন সময়ে তার পরিবারের হাতে ৫০ হাজার টাকার অনুদান প্রদান করা হয়। সেই সময় এ সহায়তা জিন্নতার চিকিৎসা ব্যয়ে বড় সহায়ক ছিল।
জিন্নতার মৃত্যুর পরও পাগলা মসজিদের মানবিক সহায়তার ধারা অব্যাহত রয়েছে। সম্প্রতি, জিন্নতার পিতার কাছে আরও ২০ হাজার টাকার একটি চেক আনুষ্ঠানিকভাবে হস্তান্তর করা হয়েছে। মসজিদ কমিটির এই উদ্যোগ সামাজিক দৃষ্টিকোণ থেকে প্রশংসনীয় হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
পাগলা মসজিদের পরিচালনা কমিটি জানিয়েছে, তারা সমাজের অসহায় ও দুঃস্থদের পাশে সবসময় থাকার চেষ্টা করে। জিন্নতার মতো হতভাগ্য শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়ানো তাদের ধর্মীয় ও মানবিক দায়িত্বের অংশ।
এ বিষয়ে জিন্নতার পরিবার জানায়, “জিন্নতা যখন অসুস্থ ছিল, তখন চিকিৎসার খরচ চালানো আমাদের জন্য খুব কঠিন হয়ে গিয়েছিল। পাগলা মসজিদ থেকে যে অর্থ সহায়তা পেয়েছিলাম, তা আমাদের জন্য আশীর্বাদস্বরূপ ছিল। আজকে আবার যে চেকটি দেওয়া হয়েছে, সেটা আমাদের জন্য মানসিক সান্ত্বনার মতো।”
এদিকে স্থানীয় মানুষজন ও সামাজিক সংগঠনগুলোও জিন্নতার মৃত্যুতে শোকপ্রকাশ করেছে এবং তার পরিবারের প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করেছে। অনেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট দিয়ে জিন্নতার আত্মার মাগফিরাত কামনা করেছেন।
জিন্নতার শিক্ষকরা বলেন, “সে ছিল অত্যন্ত মেধাবী, বিনয়ী এবং অধ্যবসায়ী। তার অকাল মৃত্যুতে আমরা এক সম্ভাবনাময় ভবিষ্যতকে হারালাম।”
জিন্নতা আক্তারের জন্য দোয়া চেয়ে তার পরিবার এবং শুভাকাঙ্ক্ষীরা বলেন, “আল্লাহ তাআলা যেন তাকে জান্নাতুল ফেরদাউস নসিব করেন এবং তার কষ্টগুলো কবুল করে নেন।”
এই ঘটনাটি আবারও প্রমাণ করে, সমাজের বিত্তবান ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলো একসঙ্গে কাজ করলে অসহায় মানুষদের পাশে দাঁড়ানো সম্ভব হয়। পাগলা মসজিদের এই সহানুভূতিমূলক ভূমিকাকে উদাহরণ হিসেবে গণ্য করা উচিত।
Post a Comment