ময়মনসিংহ জেলার নান্দাইল উপজেলায় বজ্রপাতে এক তরুণীর মৃত্যু হয়েছে। বুধবার (১৬ এপ্রিল) দুপুরে দক্ষিণ আকাশে কালো মেঘ জমে ওঠার পর ঝড়ের পূর্বাভাসের মধ্যে এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনাটি ঘটে। নিহত তরুণীর নাম হাসমা আক্তার (২২)। তিনি উপজেলার শেরপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ মাদারিনগর গ্রামের বাসিন্দা এবং নুরুল হকের মেয়ে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয়দের বরাতে জানা গেছে, বুধবার দুপুর ১টার দিকে দক্ষিণ আকাশে হঠাৎ করে ঘন কালো মেঘ জমে যায়। আবহাওয়া ক্রমেই রূপ নেয় কালবৈশাখীর পূর্বাভাসে। টিপটিপ করে বৃষ্টি শুরু হলে অনেকেই নিরাপদ আশ্রয় নিতে শুরু করেন। ঠিক এমন সময় হাসমা আক্তার ঘরের বাইরে কিছু প্রয়োজনীয় কাজ সারতে বের হন। কিন্তু মুহূর্তের মধ্যেই একটি বজ্রপাত তাকে আঘাত করে এবং তিনি ঘটনাস্থলেই পড়ে যান।
বাড়ির লোকজন বজ্রপাতের শব্দ শুনে দৌড়ে বাইরে এসে তাকে অচেতন অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে। তড়িঘড়ি করে তাকে উদ্ধার করে নান্দাইল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
এই ঘটনায় এলাকাজুড়ে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। হাসমা ছিলেন পরিবারের একমাত্র মেয়ে এবং সবার প্রিয়। তরুণী বয়সেই জীবনাবসান হওয়ায় স্থানীয়দের মাঝে চরম বেদনাবোধ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। নিহতের প্রতিবেশীরা জানান, হাসমা খুবই ভদ্র ও পরিশ্রমী ছিল। তার এমন মৃত্যু কেউ মেনে নিতে পারছেন না।
নান্দাইল মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আনোয়ার হোসেন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, “বজ্রপাতে একজন তরুণী মারা গেছেন—এমন খবর পেয়েই আমরা দ্রুত বিষয়টি যাচাই করি। প্রাথমিকভাবে এটিকে একটি প্রাকৃতিক দুর্ঘটনা হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। তবে প্রয়োজনীয় আইনগত প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হচ্ছে।”
বাংলাদেশে প্রতি বছর বজ্রপাতের ঘটনা বাড়ছে এবং এর ফলে অনেক প্রাণহানিও ঘটছে। বিশেষ করে মার্চ থেকে মে মাস পর্যন্ত সময়কাল বজ্রপাতের জন্য অধিক ঝুঁকিপূর্ণ বলে আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা মত দেন। কৃষিকাজ বা বাইরে চলাফেরার সময় জনগণকে আরও সচেতন ও সতর্ক হওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্যমতে, এপ্রিল মাসে বাংলাদেশে প্রায়শই কালবৈশাখী ঝড় ও বজ্রপাতের ঘটনা ঘটে থাকে। এ ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগে নিরাপদে থাকার জন্য বাড়ির ভিতরে অবস্থান করা, ধাতব জিনিস থেকে দূরে থাকা এবং গাছপালা বা খোলা মাঠ এড়িয়ে চলার পরামর্শ দেওয়া হয়ে থাকে।
হাসমার মৃত্যু আমাদের আবারও স্মরণ করিয়ে দেয় যে, প্রকৃতির রুদ্ররূপের সামনে মানুষ কতটা অসহায়। এমন দুর্যোগে আমাদের আরও প্রস্তুত ও সচেতন হওয়া জরুরি।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও সামাজিক সংগঠনগুলো ইতোমধ্যে নিহত পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছে এবং শোকাহত পরিবারটিকে সান্ত্বনা দিয়েছেন। আশা করা হচ্ছে, প্রশাসন থেকে প্রয়োজনীয় সহায়তা এবং দুঃখী পরিবারটির পাশে দাঁড়ানোর উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।
Post a Comment