জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) আওয়ামী লীগের কাউকে দলে গ্রহণ করবে না—এমনই সাফ বার্তা দিয়েছেন দলটির সদস্যসচিব আখতার হোসেন। তিনি স্পষ্টভাবে ঘোষণা দিয়েছেন, “আওয়ামী লীগের কেউ যদি জাতীয় নাগরিক পার্টির কোনো কর্মসূচিতে যুক্ত হওয়ার চেষ্টা করে, তাকে প্রতিহত করা হবে এবং আইনের হাতে তুলে দেওয়া হবে।”
গতকাল শুক্রবার রাতে রংপুর চেম্বার ভবনে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভা শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন তিনি। আলোচনাসভায় এনসিপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
আখতার হোসেন বলেন, “আওয়ামী লীগ যে ফ্যাসিবাদী শাসন, গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ বাংলাদেশের ওপর চাপিয়ে দিয়েছে, তাতে করে তাদের পুনর্বাসনের কোনো সুযোগ নেই। তারা এ দেশে রাজনীতি করার নৈতিক অধিকার হারিয়েছে।” তিনি আরও বলেন, এনসিপি একটি জনগণের দল, যেখানে গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের পক্ষে অবস্থানই মূল নীতি। কোনোভাবে ক্ষমতাসীন দলের লোকজনকে দলে ঢুকতে দেওয়া হবে না।বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে এনসিপির সম্পর্ক বিষয়ে জানতে চাইলে আখতার হোসেন স্পষ্ট করেন, “জাতীয় নাগরিক পার্টি, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটি—এই তিনটি ভিন্ন ভিন্ন সংগঠন। তারা নিজ নিজ প্ল্যাটফর্ম থেকে কাজ করে।” তিনি বলেন, এনসিপি একটি রাজনৈতিক দল হিসেবে নির্বাচনী ও রাজনৈতিক কার্যক্রম চালাবে। অপরদিকে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটি দেশের গণতান্ত্রিক উত্তরণের লক্ষ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির কাজ করে যাবে।থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককে বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহম্মদ ইউনূস ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মধ্যকার সাম্প্রতিক বৈঠক নিয়েও মন্তব্য করেন আখতার হোসেন। তিনি বলেন, “ড. ইউনূস বাংলাদেশের জনগণের আকাঙ্ক্ষার প্রতিনিধিত্ব করেছেন। কিন্তু শুধু কথায় কিছু হবে না। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে কার্যকর ভূমিকা রাখতে হবে। শেখ হাসিনার বিচার নিশ্চিত করতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে ব্যবস্থা নিতে হবে।”
আখতার হোসেন মনে করেন, বাংলাদেশের বর্তমান সংকট থেকে উত্তরণের জন্য একটি অন্তর্বর্তীকালীন নিরপেক্ষ সরকার প্রয়োজন, যারা জনগণের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নে আন্তর্জাতিক সহায়তা গ্রহণ করতে দ্বিধা করবে না।আলোচনাসভায় এনসিপির উত্তরাঞ্চলীয় মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম বলেন, “আমরা মনে করি, ড. মুহম্মদ ইউনূসের মতো একজন দক্ষ ও বিশ্বস্বীকৃত ব্যক্তি বর্তমানে বাংলাদেশের নেতৃত্বের জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত। তাঁর নেতৃত্বে বাংলাদেশ একটি নতুন রাজনৈতিক ধারায় প্রবেশ করতে পারবে।”
এ সময় এনসিপির যুগ্ম মুখ্য সংগঠক ফারজানা দিনা, রংপুরের সংগঠক আলমগীর নয়নসহ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটির বিভিন্ন নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।জাতীয় নাগরিক পার্টি এখন স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিচ্ছে, তারা ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সঙ্গে কোনো ধরনের আপস বা সহযোগিতা চায় না। অন্যদিকে, তারা বিকল্প নেতৃত্বের খোঁজ করছে এবং ড. ইউনূসকে সামনে রেখে নতুন রাজনৈতিক মাত্রা তৈরির চেষ্টা করছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এটি বাংলাদেশের রাজনৈতিক মঞ্চে একটি নতুন মাত্রা যোগ করতে পারে।
Post a Comment