সংবাদ প্রতিবেদন: আদিবা আক্তার
রাজনৈতিক নেতৃত্বে নারীর প্রকৃত অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে সংরক্ষিত আসনে সরাসরি ভোটের ব্যবস্থা চালুর দাবি জানিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির যুগ্ম আহ্বায়ক মনিরা শারমিন। তার মতে, বর্তমানে যে ৫০টি সংরক্ষিত নারী আসনে দলীয় মনোনয়নের মাধ্যমে নারী প্রতিনিধিদের সংসদে পাঠানো হয়, তা প্রকৃত নারী নেতৃত্ব গঠনে অন্যতম বড় প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়িয়েছে।
তিনি বলেন, “আমরা চাই, সংরক্ষিত নারী আসনে সরাসরি নির্বাচন হোক। নারী নেতৃত্বের বিকাশে নারীদের মধ্যেই হোক প্রতিদ্বন্দ্বিতা। জনগণের সরাসরি ভোটে নির্বাচিত হয়ে আসুক সেই নারী, যিনি নিজ যোগ্যতায় নেতৃত্ব দেওয়ার সক্ষমতা রাখেন।”
সম্প্রতি একটি সংবাদ সম্মেলনে দেওয়া বক্তব্যে মনিরা শারমিন আরও জানান, বিরোধী দল বিএনপি সংরক্ষিত নারী আসন ৫০ থেকে বাড়িয়ে ১০০ করার প্রস্তাব দিয়েছে। তবে তিনি এই প্রস্তাবের সমালোচনা করে বলেন, “সংখ্যা বাড়িয়ে কোনো লাভ নেই যদি পুরনো ‘সিলেকশন মডেল’ই বহাল থাকে। তাতে বরং তৃণমূলের পরিশ্রমী, কর্মঠ নারী নেত্রীরা রাজনীতির মূলধারায় প্রবেশের সুযোগ পান না।”
তার মতে, বর্তমানে যারা এই আসনগুলোতে মনোনয়ন পান, তাদের অনেকেই রাজনৈতিক অঙ্গনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখার মতো প্রস্তুত নন। অনেকের বেলায় দেখা যায়, তারা সংসদে ঠিকভাবে বক্তব্য দেওয়ার মতো ভাষাগত দক্ষতাও রাখেন না। এতে নারী নেতৃত্বের প্রকৃত চিত্র বিকৃত হয় এবং রাজনীতিতে নারীদের গ্রহণযোগ্যতা প্রশ্নবিদ্ধ হয়।
মনিরা শারমিন দৃঢ়ভাবে বলেন, “আমরা এমন এক পদ্ধতি চাই, যেখানে ১০০ সংরক্ষিত নারী আসনে ২০০ নারী প্রার্থী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। দলীয় মনোনয়নের পরিবর্তে নির্বাচনী লড়াইয়ের মাধ্যমে নির্বাচিত হয়ে তারা সংসদে যাবেন। এতে করে স্থানীয় পর্যায় থেকে উঠে আসবে প্রকৃত নেতৃত্ব, যারা দলের প্রতি নয়, জনগণের প্রতি দায়বদ্ধ থাকবেন।”
তিনি আরও যোগ করেন, স্বাধীনতা-উত্তর সময়ে রাজনৈতিক ব্যবস্থায় নারীদের নেতৃত্ব গঠনের পথ সুগম না করে বরং তা বন্ধ করে রাখা হয়েছে। দীর্ঘ সময় ধরে চলে আসা মনোনয়ন নির্ভর ব্যবস্থার ফলে রাজনীতিতে নারীদের অংশগ্রহণ কেবলমাত্র কাগজে-কলমে সীমাবদ্ধ থেকে গেছে।
দেশজুড়ে অসংখ্য নারী রয়েছেন যারা দক্ষ সংগঠক, সমাজে প্রভাবশালী, এবং নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে অবদান রাখার মতো সক্ষমতা রাখেন। অথচ শুধুমাত্র আত্মীয়তার ভিত্তিতে বা দলীয় আনুগত্যের কারণে অনেকেই মনোনয়ন পান, যা রাজনীতিকে এক ধরনের ‘পারিবারিক ক্লাবে’ পরিণত করেছে।
মনিরা শারমিনের মতে, এই প্রথা পরিবর্তন করে নারীদেরকে সরাসরি নির্বাচনের সুযোগ দিতে হবে, যাতে করে তৃণমূলের যোগ্য নেতৃত্ব জাতীয় পর্যায়ে পৌঁছাতে পারে।
নারী নেতৃত্ব বিকাশে এমন বাস্তবসম্মত ও শক্তিশালী বক্তব্য ইতোমধ্যেই সামাজিক মাধ্যমে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরাও মনে করছেন, সময় এসেছে সংরক্ষিত আসন ব্যবস্থার সংস্কার করে নারী প্রতিনিধিত্বকে সত্যিকারের গণতান্ত্রিক কাঠামোয় অন্তর্ভুক্ত করার।
Post a Comment