কিশোরগঞ্জ জেলার পাকুন্দিয়া উপজেলার ঐতিহ্যবাহী মঠখোলা ঘাটে অনুষ্ঠিত হলো হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম বৃহৎ ধর্মীয় আচার অষ্টমী স্নান। প্রতিবছরের মতো এবারও চৈত্র মাসের অষ্টমী তিথিতে হাজার হাজার পুণ্যার্থী ভক্ত, শিশু থেকে বৃদ্ধ পর্যন্ত নানা বয়সী মানুষ জড়ো হন পবিত্র ব্রহ্মপুত্র নদে স্নান করতে। ধর্মীয় আচার পালনে এই বিশাল জনসমাগম উৎসবের রূপ নেয়।
প্রাচীনকাল থেকে ব্রহ্মপুত্র নদ হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের কাছে বিশেষ পবিত্র স্থান হিসেবে পরিচিত। ভক্তদের বিশ্বাস, চৈত্র মাসের অষ্টমী তিথিতে এই নদে স্নান করলে ব্রহ্মার আশীর্বাদ লাভ হয় এবং অতীতের পাপমোচন হয়। এই বিশ্বাস ঘিরেই প্রতি বছর আয়োজন করা হয় অষ্টমী স্নান, যা স্থানীয়ভাবে একটি বৃহৎ ধর্মীয় মিলনমেলা হিসেবেই পরিচিত।
এ বছরের আয়োজনটি ছিল আরও বিশাল ও সুসংগঠিত। পাকুন্দিয়া ছাড়াও কটিয়াদি, করিমগঞ্জ, বাজিতপুর, ভৈরব, নিকলীসহ আশপাশের বিভিন্ন উপজেলা এবং জেলা থেকেও ভক্তরা এসেছেন এই পবিত্র স্নানে অংশ নিতে। সকাল থেকে শুরু হয়ে দুপুর পর্যন্ত চলে এই ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতা।
পুণ্যার্থীরা জানিয়েছেন, বছরের এ একটি দিনই তারা পরিবারের সবাইকে নিয়ে এখানে আসেন। কেউ কেউ রাতেই পৌঁছে যান ঘাটে, কেউ আবার ভোরে এসে সারিবদ্ধভাবে অপেক্ষা করেন স্নানের জন্য। ভক্তদের মুখে ছিল একরাশ প্রশান্তি ও ধর্মীয় অনুভূতির ছাপ। স্নান শেষে অনেকেই ঘাটের পাশে বসে প্রার্থনা করেন ও ধর্মীয় গান পরিবেশন করেন।
উৎসবকে কেন্দ্র করে নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিল অত্যন্ত কঠোর। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি স্বেচ্ছাসেবকরাও মাঠে ছিলেন সক্রিয়ভাবে। পাকুন্দিয়া থানার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, পুরো অনুষ্ঠান নির্বিঘ্নভাবে সম্পন্ন করতে পর্যাপ্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছিল এবং কোথাও কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। সেই সাথে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকেও নেওয়া হয় বিভিন্ন প্রস্তুতি, যেমন পানীয় জলের ব্যবস্থা, অস্থায়ী স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র এবং দিকনির্দেশনামূলক ব্যানার।
স্থানীয় একজন সেবাদানকারী স্বেচ্ছাসেবক জানান, “প্রতিবছর আমরা এই স্নানকে কেন্দ্র করে মানুষকে সঠিক দিকনির্দেশনা দেওয়ার চেষ্টা করি। যেন তারা নিরাপদে এবং শান্তিপূর্ণভাবে ধর্মীয় অনুশীলন সম্পন্ন করতে পারেন।”
পাশাপাশি এলাকাবাসী জানান, এই ধর্মীয় আয়োজন এলাকার সংস্কৃতির গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রতি বছর উৎসবটি ঘিরে ছোটখাটো বাণিজ্যিক মেলাও বসে, যেখানে স্থানীয় পণ্যের সমাহার ঘটে। এতে স্থানীয় অর্থনীতিতেও একটি ইতিবাচক প্রভাব পড়ে।
অষ্টমী স্নানকে কেন্দ্র করে স্থানীয় পর্যটনও কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে। অনেকেই পরিবারসহ ঘুরতে এসেছেন এই দিনটিতে। ফলে এ ধরনের ধর্মীয় উৎসব কেবল ধর্মীয় অনুভূতির ক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ নয়, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সম্প্রীতির প্রতীক হিসেবেও দাঁড়িয়েছে।
সার্বিকভাবে বলা যায়, কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়ায় এ বছরের অষ্টমী স্নান একটি সুশৃঙ্খল ও ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যে পূর্ণ আয়োজন হিসেবে সম্পন্ন হয়েছে। এতে অংশগ্রহণকারীদের ধর্মীয় অনুশীলন নির্বিঘ্নে সম্পন্ন হওয়ার পাশাপাশি সামাজিক বন্ধনও আরও দৃঢ় হয়েছে।
Post a Comment