কিশোরগঞ্জের পাগলা মসজিদে রেকর্ড পরিমাণ দান, নতুন ইসলামিক কমপ্লেক্স নির্মাণের উদ্যোগ
কিশোরগঞ্জ শহরের প্রাণকেন্দ্রে নরসুন্দা নদীর তীরে অবস্থিত ঐতিহাসিক পাগলা মসজিদ বাংলাদেশের অন্যতম আলোচিত ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচিত। দানের পরিমাণ ও ভক্ত-অনুরাগীদের আগ্রহে এই মসজিদটি দীর্ঘদিন ধরেই সারা দেশের নজর কাড়ছে। এবার মসজিদটির দানবাক্সে জমার পরিমাণ ছাড়িয়ে গেছে ৮০ কোটি টাকা, যা দেশের ইতিহাসে একটি ব্যতিক্রমী রেকর্ড বলেই মনে করা হচ্ছে।
গত শনিবার (১২ এপ্রিল) কিশোরগঞ্জ জেলা প্রশাসক এবং পাগলা মসজিদ পরিচালনা কমিটির সভাপতি ফৌজিয়া খান নিশ্চিত করেছেন যে, মসজিদের হিসাব অনুযায়ী এখন পর্যন্ত মোট জমা হয়েছে ৮০ কোটি ৭৫ লাখ ৭৩ হাজার ৫৭৬ টাকা। এই বিপুল অর্থ এসেছে মূলত দানবাক্স খুলে প্রাপ্ত অর্থ, স্বর্ণালংকার, হীরা ও বৈদেশিক মুদ্রা থেকে।
তিন বছরে ১১ বার খোলা হয়েছে দানবাক্স
২০২২, ২০২৩ এবং ২০২৪ সালের মধ্যে পাগলা মসজিদের দানবাক্স খোলা হয়েছে মোট ১১ বার। এর মধ্যে ২০২৪ সালেই তিনবার দানবাক্স খুলে পাওয়া গেছে ২৩ কোটি ২২ লাখ টাকারও বেশি। গত বছরের ৩০ নভেম্বর রেকর্ড ৮ কোটি ২১ লাখ টাকা পাওয়া গিয়েছিল একবারে, যা ছিল একক দান হিসেবে সর্বোচ্চ।
২০২৩ সালে চারবার খোলা হয় দানবাক্স, যার মধ্যে ৭ জানুয়ারি, ৬ মে, ১৯ আগস্ট এবং ৯ ডিসেম্বর চারটি তারিখে মোট দান পাওয়া গেছে ২১ কোটি ৮৭ লাখ ৮৫ হাজার ১৮১ টাকা।
এর আগের বছর ২০২২ সালে তিনবার খোলা হয় দানবাক্স, সেখান থেকে আসে মোট ১১ কোটি ২৮ লাখ ৫২ হাজার টাকা। প্রতিবারই অর্থ ছাড়াও স্বর্ণালংকার, হীরা এবং বিদেশি মুদ্রা পাওয়া গেছে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে।
দান ব্যবহৃত হচ্ছে জনকল্যাণমূলক কাজে
পাগলা মসজিদ পরিচালনা কমিটির তথ্যমতে, এই দান থেকে প্রাপ্ত অর্থ কেবলমাত্র মসজিদ পরিচালনাতেই নয়, বরং জেলার অন্যান্য মসজিদ, মাদরাসা, এতিমখানা এবং সমাজকল্যাণমূলক নানা কার্যক্রমে ব্যয় করা হয়। দানের এই অর্থ যাতে সর্বোত্তমভাবে কাজে লাগে, সেজন্য কঠোর তদারকি ও সুশাসন নিশ্চিত করা হয়েছে।
ইসলামিক কমপ্লেক্স নির্মাণের ঘোষণা
এত বিপুল দানের পরিপ্রেক্ষিতে পাগলা মসজিদকে আরও আধুনিক ও জাঁকজমকপূর্ণভাবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে নেয়া হয়েছে একটি বড়সড় উদ্যোগ। ঘোষণা দেয়া হয়েছে ‘পাগলা মসজিদ ইসলামিক কমপ্লেক্স’ নির্মাণের, যেখানে একসঙ্গে ৬০ হাজার মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারবেন। এই প্রকল্পের প্রাথমিক ব্যয় ধরা হয়েছে ১১৫ কোটি টাকা। এটি আন্তর্জাতিক মানের একটি ইসলামিক কমপ্লেক্স হিসেবে তৈরি হবে বলে জানা গেছে।
সর্বশেষ দানবাক্স খোলায় ২৮ বস্তা টাকা!
চার মাস ১২ দিন পর ১২ এপ্রিল সকাল ৭টায় পুনরায় দানবাক্সগুলো খোলা হয়। এতে একসঙ্গে পাওয়া গেছে ২৮ বস্তা ভর্তি টাকা। প্রায় চার শতাধিক মানুষের একটি দল এই টাকার হিসাব গণনার কাজে নিয়োজিত রয়েছে। এখনও চলছে গণনার কাজ, যা শেষ হলে আরও একটি নতুন রেকর্ড সৃষ্টি হবে বলেই ধারণা করা হচ্ছে।
এই ধরনের দান প্রবণতা এবং ধর্মপ্রাণ মানুষের উদারতা শুধু ইসলাম ধর্মের প্রতি ভালোবাসাই প্রকাশ করে না, বরং তা সমাজের প্রতি দায়িত্ববোধের একটি শক্তিশালী বার্তাও বহন করে। পাগলা মসজিদ আজ শুধুমাত্র একটি নাম নয়—এটি বাংলাদেশি মুসলমানদের বিশ্বাস, ভালোবাসা ও আস্থার এক অবিচ্ছেদ্য প্রতীক।
Post a Comment