সংবাদ প্রতিবেদন:
কিশোরগঞ্জ শহরের নিউটাউন এলাকায় একটি ভাড়া বাসা থেকে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)–এর কনস্টেবল পদে কর্মরত আমিনুল ইসলাম নামের এক পুলিশ সদস্যের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। সোমবার দিবাগত রাত ১২টার দিকে স্থানীয়দের মাধ্যমে সংবাদ পেয়ে কিশোরগঞ্জ মডেল থানা পুলিশ মরদেহটি উদ্ধার করে।
নিহত আমিনুল ইসলাম (৩০) নেত্রকোনা জেলার মদন উপজেলার গঙ্গানগর গ্রামের বাসিন্দা। তিনি আবদুল হামিদের ছেলে এবং দীর্ঘদিন ধরে কিশোরগঞ্জে পিবিআই অফিসে কনস্টেবল হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তার হঠাৎ মৃত্যু ঘিরে সহকর্মী ও এলাকাবাসীর মধ্যে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, নিহত আমিনুল ইসলাম সম্প্রতি ঈদ উপলক্ষে ছুটিতে বাড়ি গিয়েছিলেন। সেখানে স্ত্রী ও চার বছর বয়সী কন্যা সন্তানসহ কয়েকদিন কাটিয়ে কর্মস্থলে ফিরে আসেন। সর্বশেষ সোমবার দুপুরে তিনি মুঠোফোনে তার মা ও স্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেন। এরপর থেকেই তার ব্যবহৃত ফোন নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়।
পরিবারের সদস্যদের পক্ষ থেকে তার কোনো খোঁজ না পেয়ে উদ্বেগ তৈরি হয় এবং একপর্যায়ে বিষয়টি কিশোরগঞ্জের সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশকে জানানো হয়। পরে পুলিশ নিউটাউনের ওই ভাড়া বাসায় গিয়ে তাকে সিলিং ফ্যানের সঙ্গে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পায়।
আমিনুল ইসলামের শ্যালক ইয়াসিন মিয়া সাংবাদিকদের জানান, “দুলাভাই সোমবার দুপুরে ফোনে কথা বলেন। এরপর হঠাৎ করেই যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। ফোন বন্ধ থাকায় আমরা চিন্তিত হয়ে পড়ি। পরে স্থানীয় পুলিশের সহায়তায় তার বাসায় গিয়ে মরদেহ পাওয়া যায়। কিন্তু কী কারণে তিনি এমন করলেন, তা আমরা কিছুই বুঝে উঠতে পারছি না।”
পুলিশ প্রাথমিকভাবে ধারণা করছে, এটি আত্মহত্যার ঘটনা হতে পারে। তবে বিষয়টি তদন্তাধীন রয়েছে এবং মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য কিশোরগঞ্জ ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।
কিশোরগঞ্জ মডেল থানার ওসি (তদন্ত) একে এম শামীম বলেন, “আমরা খবর পেয়ে রাতেই ঘটনাস্থলে যাই এবং নিহতের মরদেহ উদ্ধার করি। ঘটনাস্থলে তল্লাশি চালিয়ে কোনো সুইসাইড নোট পাওয়া যায়নি। প্রাথমিকভাবে এটি আত্মহত্যা মনে হলেও আমরা সব ধরনের সম্ভাবনা খতিয়ে দেখছি।”
তিনি আরও বলেন, “নিহতের পরিবার, সহকর্মী এবং প্রতিবেশীদের সঙ্গে কথা বলে তার মানসিক অবস্থা ও সাম্প্রতিক জীবনযাত্রা সম্পর্কে জানার চেষ্টা করা হচ্ছে। তদন্তের স্বার্থে আরও কিছু বিষয় যাচাই করা হবে।”
এদিকে পুলিশ সদস্যের এমন মৃত্যু ঘিরে সহকর্মী ও স্থানীয়দের মাঝে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। অনেকেই মনে করছেন, একজন তরুণ পুলিশ সদস্যের এমন আকস্মিক মৃত্যুর পেছনে ব্যক্তিগত, পারিবারিক বা মানসিক কোনো চাপ থাকতে পারে। তবে বিষয়টি নিশ্চিত করে বলার আগে তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশের অপেক্ষা করতে হবে।
এ ঘটনাটি কেবল একটি ব্যক্তিগত ট্র্যাজেডি নয়, বরং দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীতে কর্মরত সদস্যদের মানসিক স্বাস্থ্যের বিষয়েও প্রশ্ন তুলেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দীর্ঘদিনের কর্মচাপ, পারিবারিক দূরত্ব এবং মানসিক চাপে ভোগার বিষয়গুলো নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের আরও মনোযোগী হওয়া দরকার।
Post a Comment