বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে নাগরিকত্ববোধ ও গণতান্ত্রিক অধিকারের প্রশ্নে এক ভিন্নমাত্রা যোগ করতে চায় জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। দলটির কেন্দ্রীয় যুগ্ম সদস্য সচিব জয়নাল আবেদীন শিশির বলেছেন, গত ৫৪ বছরে বাংলাদেশের মানুষ প্রকৃত অর্থে "নাগরিক" হয়ে উঠতে পারেনি। সেই অভাব পূরণ করতেই এনসিপি’র আত্মপ্রকাশ—যার লক্ষ্য জনগণকে সত্যিকারের নাগরিক মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করা।
শনিবার (৫ এপ্রিল) কুমিল্লার লালমাই উপজেলার আলীশ্বর উত্তর বাজারে আয়োজিত এক রাজনৈতিক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন। অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বাগমারা দক্ষিণ ইউনিয়ন জাতীয় নাগরিক পার্টি।
শিশির বলেন, "আমাদের দলের নাম নাগরিক পার্টি কেন, এই প্রশ্ন অনেকের মনে আসতেই পারে। কারণ এই দেশের মানুষ দীর্ঘকাল ধরে বিদেশি শাসনের শৃঙ্খলে বন্দী ছিল—ব্রিটিশ শাসন, পাকিস্তানি শোষণ, এমনকি স্বাধীনতা পরবর্তী সময়েও আমরা যেন একধরনের রাজনৈতিক বন্দিত্বে থেকেছি।" তিনি জানান, এনসিপি এমন একটি প্ল্যাটফর্ম যেখানে মানুষ নাগরিক অধিকার, মর্যাদা ও স্বাধীনতা নিয়ে জীবনযাপন করতে শিখবে।
বর্তমান সংবিধানকে দায়ী করে শিশির বলেন, “বাংলাদেশের সংবিধান এমনভাবে তৈরি হয়েছে যে, এক শতাংশ ভোট না পেলেও কেউ প্রধানমন্ত্রী হতে পারে, মন্ত্রী বা এমপি হতে পারে। ভোটবিহীনভাবে যারা ক্ষমতায় রয়েছে, তারা এই সংবিধানের সুযোগ নিয়ে দীর্ঘদিন টিকে আছে। তাই এই সংবিধান জনবান্ধব নয়, বরং ক্ষমতাকেন্দ্রিক একটি ব্যবস্থা তৈরি করেছে।”
তিনি আরও দাবি করেন, কার্যকর রাজনৈতিক বন্দোবস্ত থাকলে আন্দোলনের মাধ্যমেই সরকার পরিবর্তন সম্ভব হতো। বর্তমান কাঠামোতে তা অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে।
আলোচনা সভায় ড. মোহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রশংসা করে শিশির বলেন, "এই সরকার যত সময় পার করছে, ততই জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণে এসেছে, চাঁদাবাজি ও টেন্ডারবাজদের দৌরাত্ম্য কমেছে, আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও বাংলাদেশের অবস্থান উন্নত হয়েছে।"
তরুণদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, "এনসিপি হলো তরুণদের দল। দেশের ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব তারাই দেবে। আমরা চাই আপনারা প্রশ্ন করুন, জানুন, মত দিন। এনসিপি গঠনের আগে দেশের মানুষের প্রত্যাশা, মতামত, জরিপ সবকিছুকে গুরুত্ব দিয়েই দল গঠন করা হয়েছে।"
ড. ইউনূসের বিষয়ে তিনি বলেন, “দেশের ৭৫-৮০ শতাংশ মানুষ এখনো ড. ইউনূসের পক্ষেই আছে। অনেকে চায় গণভোটের মাধ্যমে তার অবস্থান নিশ্চিত করা হোক। আমরা যদি তাঁকে বিরক্ত না করি, কাজ করতে দেই, তাহলে আগামী ৮-১০ বছরে বাংলাদেশ উন্নয়নের ক্ষেত্রে এশিয়ার অন্যতম মডেল রাষ্ট্রে পরিণত হবে।”
এসময় উপস্থিত ছিলেন এনসিপি নেতা মাইন উদ্দিন, খন্দকার ওমর ফারুক, শাকিল আহম্মেদ (গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ), জালাল আহমেদ, আবুল কাশেম, হেলাল আহমেদ, নোমান হোসেন (বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন) ও জুলাই আন্দোলনের সময় আহত মেহেদী হাসান শুভ। সভা শেষে শহিদদের আত্মার শান্তি এবং আহতদের সুস্থতা কামনায় বিশেষ মোনাজাত করা হয়।
Post a Comment