ফিলিস্তিনে হামলার প্রতিবাদে ক্লাস বর্জন কর্মসূচি, শিক্ষকদের কলেজে আসা বাধ্যতামূলক করে নোটিশ

ফিলিস্তিনে ইসরায়েলি হামলার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে যখন প্রতিবাদের ঝড় বইছে, তখন বাংলাদেশেও শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ‘নো ওয়ার্ক, নো স্কুল’ কর্মসূচির মাধ্যমে সংহতি জানাচ্ছেন। তবে এই প্রেক্ষাপটে কিশোরগঞ্জের ওয়ালী নেওয়াজ খান কলেজে কর্তৃপক্ষের একটি ভিন্নধর্মী সিদ্ধান্ত ব্যাপক আলোচনা এবং বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।

৬ এপ্রিল ২০২৫, শনিবার কলেজ প্রশাসনের পক্ষ থেকে একটি অফিসিয়াল নোটিশ জারি করা হয়। এতে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়, আগামী ৭ এপ্রিল রবিবার সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত পূর্বনির্ধারিত সকল কার্যক্রম যথারীতি চলবে এবং শিক্ষকগণকে কলেজে উপস্থিত থাকা বাধ্যতামূলক। নোটিশটিতে কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন স্বাক্ষর করেন।

নোটিশে আরও বলা হয়, পূর্বনির্ধারিত কাজের ক্ষেত্রে যেন কোনো ধরনের ব্যাঘাত না ঘটে, সে বিষয়েও সকলকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। কলেজ কর্তৃপক্ষের দাবি, নির্ধারিত একাডেমিক ক্যালেন্ডার অনুযায়ী প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করাই এ সিদ্ধান্তের মূল উদ্দেশ্য।

তবে শিক্ষার্থীদের একটি বড় অংশ বিষয়টিকে শুধুমাত্র প্রশাসনিক নির্দেশ হিসেবে দেখছেন না। বরং তাঁরা মনে করছেন, এটি তাঁদের মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে বাধাগ্রস্ত করছে এবং মানবিক আন্দোলনের অংশ হতে না দেওয়ার একটি প্রচ্ছন্ন প্রয়াস।

দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র রায়ান তার প্রতিক্রিয়ায় বলেন, “আজ যখন বিশ্বজুড়ে শিক্ষার্থীরা ফিলিস্তিনের গণহত্যার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাচ্ছে, তখন আমাদের কলেজে এর উল্টো পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে। এটি শিক্ষার্থীদের মানবিক মূল্যবোধ এবং ন্যায়ের পক্ষে অবস্থান নেওয়ার সুযোগ থেকে বঞ্চিত করছে। এই ধরনের নির্দেশ আমাদের মতপ্রকাশের স্বাধীনতার পরিপন্থী।”

প্রসঙ্গত, ৭ এপ্রিল দেশের বিভিন্ন স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘নো ওয়ার্ক, নো স্কুল’ কর্মসূচি পালিত হয়েছে। অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে স্বতঃস্ফূর্তভাবে ক্লাস বর্জন করে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা মানববন্ধন ও প্রতিবাদ কর্মসূচিতে অংশ নেন। তাদের দাবি, ফিলিস্তিনে চলমান মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক মহলের পাশাপাশি বাংলাদেশের শিক্ষাঙ্গনেরও সোচ্চার হওয়া উচিত।

তবে ওয়ালী নেওয়াজ খান কলেজের একজন শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, “আমরা মানবিক আন্দোলন সমর্থন করি, তবে একই সঙ্গে আমাদের একাডেমিক দায়িত্ব ও প্রশাসনিক নির্দেশনার প্রতিও দায়বদ্ধ। শিক্ষকদের বাধ্যতামূলক উপস্থিতির নির্দেশকে আমরা প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত হিসেবে দেখছি।”

অন্যদিকে, কিছু অভিভাবক এবং স্থানীয় নাগরিকও বিষয়টি নিয়ে মতভেদ পোষণ করেছেন। কেউ কেউ বলছেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হচ্ছে শৃঙ্খলা ও নিয়মের জায়গা। সেখানে আন্দোলন ও কর্মসূচি কখনো কখনো ব্যাঘাত ঘটাতে পারে নিয়মিত শিক্ষায়। আবার কেউ কেউ মনে করছেন, তরুণ প্রজন্মের এই প্রতিবাদই ভবিষ্যতের মানবিক সমাজ গঠনে সহায়ক ভূমিকা রাখবে।

এই ঘটনাটি দেশের শিক্ষাঙ্গনে একটি বড় প্রশ্ন তুলে দিয়েছে—শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কেবল শিক্ষার জায়গা, নাকি মানবিক মূল্যবোধ ও নৈতিক অবস্থানের চর্চার মঞ্চও? প্রশাসনিক নির্দেশনার সীমারেখার মধ্যে মানবিক ও সামাজিক দায়বদ্ধতার ভারসাম্য রক্ষা করাটাই এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

Post a Comment

Previous Post Next Post