নিউজ ডেস্ক: কিশোরগঞ্জ সংবাদ
প্রাণঘাতী প্রতারণার আরেকটি নির্মম দৃষ্টান্ত তৈরি হলো কিশোরগঞ্জের ভৈরব উপজেলায়। জীবনের স্বপ্ন পূরণে ইউরোপে পাড়ি জমাতে গিয়ে লিবিয়ায় অমানবিক নির্যাতনের শিকার হয়ে প্রাণ হারালেন ভৈরবের এক তরুণ সোহাগ। অভিযোগ উঠেছে, ইতালি পাঠানোর প্রলোভনে একটি দালালচক্র তাঁকে প্রতারণার জালে ফেলে আটকে রাখে এবং দীর্ঘদিন ধরে মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন চালায়।
সোহাগ (২৮) ছিলেন ভৈরব উপজেলার কালিপুর দক্ষিণপাড়ার মৃত নূর মোহাম্মদ মিয়ার দ্বিতীয় পুত্র। আট বছর কাতারে থেকে কর্মজীবন গড়ার পর দেশে ফিরে তিনি নতুন জীবনের শুরু করেন। এরপর, আরও ভালো ভবিষ্যতের আশায় তিনি ইতালিতে যাওয়ার স্বপ্ন বুনেন। সেই উদ্দেশ্যে তিনি নরসিংদীর বেলাবো উপজেলার বারৈচা গ্রামের সেন্টু মিয়া নামে এক দালালের সঙ্গে ১৬ লাখ টাকার বিনিময়ে চুক্তিবদ্ধ হন।
পারিবারিক সূত্র জানায়, ৭ মাস আগে অবৈধভাবে লিবিয়া পৌঁছান সোহাগ। চুক্তি অনুযায়ী, লিবিয়া থেকে এক মাসের মধ্যে তাঁকে সাগরপথে ইতালি পাঠানোর কথা ছিল। কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি। বরং, প্রতিনিয়ত সোহাগ নানা অজুহাতে দালালচক্রের হাতে নির্যাতনের শিকার হতে থাকেন। খাবার না দেওয়া, শারীরিক আঘাত এবং মানসিক চাপে ধীরে ধীরে অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি।
অবশেষে গত রোববার (৩০ মার্চ) লিবিয়ার একটি হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। লিবিয়ায় অবস্থানরত আরেক বাংলাদেশির মাধ্যমে সোহাগের মৃত্যুর সংবাদ তাঁর পরিবারের কাছে পৌঁছে যায়।
সোহাগের বড় ভাই সুজন মিয়া, যিনি ইতালিতে প্রবাসী, জানান, “আমার ভাই কাতারে ভালোভাবেই ছিল। কিন্তু দালালের মিথ্যা প্রলোভনে পড়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে লিবিয়ায় যায়। আমরা ভেবেছিলাম, এক মাসেই সে ইতালিতে পৌঁছে যাবে। কিন্তু দীর্ঘ সাত মাস ধরে ওকে আটকে রেখে শুধু অত্যাচার করা হয়েছে। এমনকি মৃত্যুর আগে চিকিৎসাও পায়নি। আমরা সরকারের কাছে অনুরোধ করছি, আমার ভাইয়ের মরদেহ যেন দেশে ফিরিয়ে আনা হয় এবং জড়িত দালালদের কঠোর শাস্তি দেওয়া হয়।”
অভিযুক্ত দালাল সেন্টু মিয়ার সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তিনি ফোন ধরেননি। স্থানীয়দের দাবি, দীর্ঘদিন ধরেই তিনি বিদেশগামী তরুণদের ইতালি পাঠানোর নামে প্রতারণা করে আসছেন।
এ বিষয়ে ভৈরব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শবনম শারমিন জানান, “আমরা ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। মরদেহ দেশে ফিরিয়ে আনতে সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে।”
এই ঘটনার পর ভৈরবসহ আশপাশের এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। মানবাধিকারকর্মীরা বলছেন, এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে সরকারের উচিত সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ নেওয়া, দালালদের তালিকা তৈরি করা এবং কড়া নজরদারি চালানো।
বিদেশে স্বপ্নের জীবন গড়তে গিয়ে প্রতারিত হওয়া এমন ঘটনার সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, জনসচেতনতা বৃদ্ধি এবং বিদেশগমন প্রক্রিয়ায় কঠোর নিয়মনীতি আরোপ করলেই এমন দুর্ঘটনা অনেকাংশে প্রতিরোধ করা সম্ভব।
Post a Comment