ভৈরবে দুই পক্ষের সংঘর্ষে নিহত ১, আহত অন্তত ২৫: ৫৭ বছরের পুরনো বিরোধে রক্তক্ষয়ী পরিণতি

কিশোরগঞ্জের ভৈরব উপজেলার শ্রীনগর ইউনিয়নের ভবানীপুর গ্রামে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের সংঘর্ষে মিজান মিয়া (৪৫) নামের একজন নিহত হয়েছেন এবং অন্তত ২৫ জন আহত হয়েছেন। শুক্রবার (১৮ এপ্রিল) সকাল ১১টার দিকে এক সালিশি দরবার চলাকালে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।

নিহত মিজান মিয়া ভবানীপুর সোলাইমানপুর গ্রামের মইদর মুন্সি বাড়ির বাসিন্দা এবং মৃত রবিউল্লাহ মিয়ার ছেলে। তিনি একজন ডেকোরেশন কর্মী ছিলেন ও তিন সন্তানের জনক।

দীর্ঘদিনের রেষারেষির রক্তাক্ত চূড়ান্ত রূপ

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ভৈরবের সাদেকপুর ইউনিয়নের মৌটুপি গ্রামের কর্তা বাড়ি ও সরকার বাড়ির দুই বংশের মধ্যে দীর্ঘ ৫৭ বছর ধরে চলে আসছে আধিপত্য বিস্তারের দ্বন্দ্ব। গত ১৫ এপ্রিল এ বিরোধ নতুন করে চরমে ওঠে, যখন দুই পক্ষের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। এতে উভয় পক্ষের প্রায় ৩০ জন আহত হন।

এই ঘটনার রেশ ছড়িয়ে পড়ে পার্শ্ববর্তী ভবানীপুর গ্রামেও। গতকাল শুক্রবার সকালে এ নিয়ে স্থানীয় নেতৃবৃন্দের উপস্থিতিতে একটি সালিশি বৈঠকের আয়োজন করা হয়। কিন্তু সকাল সাড়ে ১০টার দিকে দরবার শুরু হওয়ার পরই কথাকাটাকাটির এক পর্যায়ে ভবানীপুরের বুদুর গোষ্ঠী (বাদশা ডাকাত গ্রুপ) এবং মইদর মুন্সি বাড়ির লোকজনের মধ্যে সংঘর্ষ বেঁধে যায়।

নিহত মিজান মিয়াকে টেটা মেরে হত্যা

প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্যমতে, সংঘর্ষ চলাকালে প্রতিপক্ষের ছোঁড়া টেটার আঘাতে গুরুতর আহত হন মিজান মিয়া। পরে স্থানীয়রা তাকে ভৈরব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

ঘটনায় আহতদের মধ্যে অপু মিয়া (১৭), আক্তার হোসেন (৩০), দুধ মিয়া (৩০) ও পাপ্পু মিয়া (২২) চিকিৎসা নিয়েছেন। তাদের মধ্যে অপু ও দুধ মিয়াকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

পরিবারের দাবি ও স্থানীয়দের প্রতিক্রিয়া

নিহতের ভাই ফয়সাল মিয়া ও পারভেজ মিয়া অভিযোগ করেন, “আমার ভাইয়ের শ্বশুরবাড়ি মৌটুপি গ্রামে। সেখানে পুরনো বিরোধের কারণে কিছুদিন আগে বড় ধরনের সংঘর্ষ হয়। সেটির প্রতিক্রিয়া আমাদের গ্রামে এসে লাগে। আজকের সালিশি বৈঠকে শান্তিপূর্ণ সমাধানের কথা ছিল, কিন্তু আমাদের ভাইকে বুদুর গোষ্ঠীর লোকজন পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে।”

স্থানীয়রা জানায়, কর্তা বাড়ি ও সরকার বাড়ির এই দ্বন্দ্বে এখন পর্যন্ত অন্তত ১৪ জন প্রাণ হারিয়েছেন। প্রতি সংঘর্ষের পর মামলা হলেও উভয় পক্ষের অনেকে জামিনে মুক্ত হয়ে আবারো সহিংসতায় জড়ায়।

প্রশাসনের অবস্থান

ভৈরব থানা অফিসার ইনচার্জ (ওসি) খন্দকার ফুয়াদ রুহানী জানান, “নিহতের পরিবারের লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের প্রক্রিয়া চলছে। এলাকার শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।”

ভৈরব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ডা. মেহেদী হাসান বলেন, “মিজান মিয়াকে হাসপাতালে আনার আগেই তার মৃত্যু হয়েছে। আহতদের মধ্যে দু’জনকে ঢাকা মেডিকেলে পাঠানো হয়েছে, আহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।”

স্থানীয়দের আহ্বান

এলাকাবাসী ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা দীর্ঘদিনের এই রক্তক্ষয়ী দ্বন্দ্বের শান্তিপূর্ণ সমাধানে প্রশাসন ও রাজনৈতিক নেতাদের সক্রিয় হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

Post a Comment

Previous Post Next Post