কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জে আওয়ামী নেতার তেলেসমাতিতে টেন্ডার ছাড়া খেয়াঘাট ইজারা!

কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জ উপজেলায় স্থানীয় সরকারের নীতিমালা উপেক্ষা করে খেয়াঘাট ইজারা প্রদান নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে ব্যাপক আলোড়ন। সুতারপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. কামাল হোসেনের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে—তিনি যথাযথ টেন্ডার প্রক্রিয়া অনুসরণ না করে পছন্দের এক ব্যক্তিকে খেয়াঘাটের ইজারা দিয়েছেন, এমনকি এই প্রক্রিয়ায় ইউনিয়নের প্রশাসনিক কর্মকর্তাকে জিম্মি করে স্বাক্ষর আদায়ের অভিযোগও রয়েছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সরকার ১৪৩২ বঙ্গাব্দের জন্য সুতারপাড়া ইউনিয়নের উত্তর গণেশপুর খেয়াঘাট ইজারা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। নিয়ম অনুযায়ী, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে একটি টেন্ডার কমিটি গঠন করে দেওয়া হয় এবং তা ১৭ মার্চ বাস্তবায়িত হয়। সরকারি বিধিমালা অনুযায়ী, ওই কমিটির সভায় চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়ে টেন্ডার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর সর্বোচ্চ দরদাতার মধ্যে ইজারা দেওয়ার বিধান রয়েছে।

কিন্তু অভিযোগে বলা হয়, চেয়ারম্যান কামাল হোসেন কোনো সভা না করে নিজ পছন্দের কয়েকজন সদস্যের বাড়িতে রেজুলেশন খাতা পাঠিয়ে স্বাক্ষর সংগ্রহ করেন। এই প্রক্রিয়াকে অনেকেই “ভুয়া সভা” আখ্যা দিয়েছেন। প্রশাসনিক কর্মকর্তা তোফায়েল আহমেদ এক লিখিত অভিযোগে দাবি করেন, ৭ এপ্রিল তাঁকে একটি নতুন রেজুলেশন খাতা নিয়ে শহরের পুরানথানা এলাকায় যেতে বলা হয়। সেখানে গিয়ে তিনি চেয়ারম্যানের অনুসারীদের হাতে পড়েন। অভিযোগ অনুযায়ী, আলম, মিজান ও ফারুক নামের তিন ব্যক্তি তাঁকে একটি দোকানের দ্বিতীয় তলায় নিয়ে গিয়ে দরজা বন্ধ করে জোর করে স্বাক্ষর আদায় করেন। তিনি আরও জানান, চেয়ারম্যান মোবাইলে তাকে হুমকি দিয়ে স্বাক্ষর দিতে বলেন।

ঘটনার পরপরই তোফায়েল আহমেদ বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিতভাবে অভিযোগ করেন। শুধু তাই নয়, ইউনিয়ন পরিষদের সংরক্ষিত নারী সদস্যসহ মোট তিনজন সদস্যও ইউএনও বরাবর পৃথক অভিযোগ দিয়েছেন। তারা দাবি করেন, তারা টেন্ডার কমিটির সদস্য হলেও খেয়াঘাট ইজারা বিষয়ে কিছুই জানেন না এবং কোনো সভার অংশও হননি।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাহমিনা আক্তার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, “প্রাথমিক তদন্তে প্রমাণ মিলেছে যে চেয়ারম্যান নিয়ম ভেঙে ইজারা প্রদান করেছেন। এ কারণে তাঁকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া প্রশাসনিক কর্মকর্তাকে হুমকি দেওয়ার অভিযোগেরও তদন্ত চলছে। তদন্ত শেষে যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

অন্যদিকে, চেয়ারম্যান কামাল হোসেন মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে অভিযোগ অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, “কমিটির সব সদস্যদের কাছ থেকে স্বাক্ষর নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।” তবে তিনি স্বীকার করেন যে করিমগঞ্জ উপজেলা বিএনপির কয়েকজন নেতার সুপারিশে একজনকে খেয়াঘাট ইজারা দেওয়া হয়েছে।

এই ঘটনাকে ঘিরে সুতারপাড়া এলাকায় ক্ষোভ ও উত্তেজনা বিরাজ করছে। সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে স্থানীয় নেতৃবৃন্দ পর্যন্ত বিষয়টি নিয়ে সরব হয়েছেন। অনেকেই মনে করছেন, এই ধরনের কর্মকাণ্ড স্থানীয় সরকারের প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থা নষ্ট করে দিচ্ছে।

এ ঘটনায় প্রশাসন যদি সঠিক ও দ্রুত পদক্ষেপ না নেয়, তাহলে ভবিষ্যতে এমন অনিয়ম আরও বিস্তৃত আকারে ছড়িয়ে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন সচেতন মহল।

Post a Comment

Previous Post Next Post