আওয়ামী লীগের বিচার দাবিতে হেফাজত ও এনসিপির ঐক্যমত: দলীয় নিবন্ধন বাতিল ও সন্ত্রাসী সংগঠনের ঘোষণার আহ্বান

আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগে দলীয়ভাবে বিচার চেয়ে একমত হয়েছে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ ও জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। দুই সংগঠনের শীর্ষ নেতাদের উপস্থিতিতে আয়োজিত এক বিশেষ বৈঠকে এই ঐক্যমতের সৃষ্টি হয়, যা রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন মাত্রা যোগ করেছে।

বুধবার (৯ এপ্রিল) দুপুর সাড়ে ১১টার দিকে রাজধানীর বাংলামোটরে অবস্থিত এনসিপির অস্থায়ী কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এই গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। হেফাজতে ইসলামের আগ্রহে আয়োজিত এ আলোচনায় উভয় সংগঠনের জ্যেষ্ঠ নেতারা উপস্থিত ছিলেন এবং দেশের বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট নিয়ে বিশদভাবে আলোচনা করেন।

বৈঠকে আলোচনার মূল বিষয় ছিল আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে গণহত্যা এবং নিপীড়নের অভিযোগে দলীয়ভাবে বিচার দাবি। আলোচনার এক পর্যায়ে নেতারা চারটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছান, যা ভবিষ্যতের রাজনৈতিক আন্দোলনের রূপরেখা নির্ধারণে ভূমিকা রাখতে পারে।

১. আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে গণহত্যার দায়ে দল হিসেবে বিচার সম্পন্ন করতে হবে।
২. বিচার প্রক্রিয়া শুরু না হওয়া পর্যন্ত আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক কার্যক্রম সম্পূর্ণভাবে স্থগিত রাখতে হবে এবং তাদের দলীয় নিবন্ধন বাতিল করতে হবে।
৩. জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার আগেই আওয়ামী লীগের বিচার কার্যক্রম শুরু হওয়ার দৃশ্যমান অগ্রগতি থাকতে হবে।
৪. আওয়ামী লীগকে আনুষ্ঠানিকভাবে একটি সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে ঘোষণা করতে হবে।

বৈঠক শেষে এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব সাংবাদিকদের জানান, “দল হিসেবে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে গণহত্যার দায়ে বিচার চাওয়া, তাদের নিবন্ধন বাতিল, রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধকরণ এবং সন্ত্রাসী সংগঠনের তকমা দেওয়ার বিষয়ে আমরা একমত হয়েছি। তবে বৈঠকে জাতীয় নির্বাচন সংক্রান্ত কোনো আলোচনা হয়নি।”

এই আলোচনা শুধু আওয়ামী লীগবিরোধী কর্মসূচিতেই সীমাবদ্ধ ছিল না। বৈঠকে বর্তমানে বিদ্যমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট, ফ্যাসিবাদী শাসনের অভিযোগ, এবং হেফাজতের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত রাজনৈতিক প্রতিহিংসামূলক মামলাগুলোর অবসান নিয়েও বিস্তারিত আলোচনা হয়। হেফাজতের নেতারা দাবি করেন, পূর্ববর্তী সময়গুলোতে সরকার রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করেছে, যা এখনও ঝুলে আছে। এসব মামলা দ্রুত প্রত্যাহার ও নিষ্পত্তির আহ্বান জানান উভয় পক্ষ।

বৈঠকে এনসিপির নেতারা সংস্কারমূলক নানা প্রস্তাব উত্থাপন করেন, যার মাধ্যমে রাজনৈতিক পরিসরকে অধিকতর গ্রহণযোগ্য ও সমতাভিত্তিক করে তোলার বিষয়ে আলোচনা হয়। হেফাজতের পক্ষ থেকেও কিছু প্রস্তাব দেওয়া হয়, যেগুলো নিয়ে পরবর্তী সময়ে যৌথ কার্যক্রম পরিচালনার বিষয়ে মতবিনিময় হয়।

এই গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে হেফাজতে ইসলামের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের মহাসচিব মাওলানা সাজেদুর রহমান, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা জুনায়েদ আল হাবিব, যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হক, মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী, নায়েবে আমির আহমেদ আবদুল কাদের, মাওলানা আহমেদ আলী কাসেমী এবং মাওলানা মহিউদ্দিন রব্বানী।

অন্যদিকে, এনসিপির পক্ষে বৈঠকে অংশ নেন আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম, সদস্যসচিব আখতার হোসেন, মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ, সারজিস আলম, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব, যুগ্ম আহ্বায়ক আশরাফ উদ্দীন মাহাদী এবং সংগঠক মো. সানাউল্লাহ ও রফিকুল ইসলাম আইনী।

এই বৈঠকের মধ্য দিয়ে দুই সংগঠনের মধ্যে রাজনৈতিক অবস্থান আরও সুদৃঢ় হলো বলে বিশ্লেষকদের ধারণা। অদূর ভবিষ্যতে এ ধরনের যৌথ উদ্যোগ আরও তীব্র হতে পারে, যা দেশের রাজনীতিতে নতুন চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করতে পারে।

Post a Comment

Previous Post Next Post